
ভারতকে শত্রু ভাববেন না, নয়াদিল্লির ওপর চাপ সৃষ্টি করে ঘরেই বিরোধের মুখে ট্রাম্প
ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক গত দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ পর্যায়ে রয়েছে ট্রাম্প ২.০ জমানায়। যদিও কয়েক মাস আগেও এই দুটি গণতান্ত্রিক দেশ একে অপরের কাছাকাছি ছিল। এই আবহে রাষ্ট্রসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ওয়াশিংটন ও নয়াদিল্লির মধ্যকার সম্পর্ক ভাঙনের দ্বারপ্রান্তে এবং চিন ক্রমেই ভারতে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। এই আবহে ওয়াশিংটন যদি নয়াদিল্লিকে হারায়, তবে তা কৌশলগত বিপর্যয় হতে চলেছে। এরই সঙ্গে ভারতকে যাতে ট্রাম্প প্রশাসন শত্রু হিসেবে বিবেচনা না করে, তার জন্য সতর্ক করে দেন তিনি।
হ্যালি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত যত দ্রুত সম্ভব দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ঠিকঠাক করে নেওয়া। নিউজউইকে প্রকাশিত এক নিবন্ধে নিকি হ্যালি বলেন, রাশিয়ার তেল ও শুল্ক বিরোধের আবহে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ফাটল ধরতে দিতে পারে না ট্রাম্প প্রশাসন। চিনকে মোকাবেলা করতে হলে আমেরিকাকে ভারতের বন্ধু হতে হবে। এই মুহূর্তে নয়াদিল্লিকে হারাতে পারে না ওয়াশিংটন। অবশ্য ট্রাম্প প্রশাসনের এই দাবিকে হ্যালি সমর্থন করেছেন যে ভারত রাশিয়ার তেল ক্রয় অব্যাহত রেখেছে বলেই পুতিনের যুদ্ধে অর্থায়নের সমস্যা নেই। তবে ভারতকে 'শত্রু' হিসাবে বিবেচনা করার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন তিনি।
নিকি হ্যালি বলেন, এশিয়ায় চিনের আধিপত্য মোকাবিলায় সক্ষম একমাত্র দেশের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক নষ্ট করলে তা একটি বড় সংকট হবে। ট্রাম্প প্রশাসনকে সতর্ক করে নিকি হ্যালি বলেন, ওয়াশিংটনের কাছে ভারত বন্ধুর চেয়েও বেশি কিছু। তিনি বলেন, ওয়াশিংটনের অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা লক্ষ্যের জন্য ভারত অপরিহার্য। আজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার উৎপাদন ঘাঁটি চিন থেকে সরিয়ে নিতে চায় এবং ভারত ছাড়া অন্য কোনও দেশ এই সুযোগ দিতে পারে না। চিনের সমতুল্য টেক্সটাইল, ফোন এবং সোলার প্যানেলের মতো জিনিস তৈরির ক্ষমতা ভারতের রয়েছে। হ্যালি ভারতের উন্নয়ন ও ভূ-রাজনৈতিক শক্তি বাড়ানোর ওপরও জোর দেন। নিকি হ্যালি বলেন, আমরা যদি স্পষ্ট ভাষায় বলি, ভারতের উন্নয়ন যত বাড়বে এবং তার শক্তি বাড়বে, চিনের উচ্চাকাঙ্ক্ষাও তত কমবে। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, বেজিং ও মস্কো ওয়াশিংটন ও নয়াদিল্লির মধ্যে বিভেদের পূর্ণ সুযোগ নেবে এবং বিশ্বের দুই বৃহত্তম গণতন্ত্রের মধ্যে একটি বড় ব্যবধান তৈরি করবে।
তাৎপর্যপূর্ণভাবে, আমেরিকার ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথমে দাবি করেছিলেন, বাণিজ্যকে হাতিয়ার করেই নাকি ভারত-পাক সংঘাত তিনি থামিয়েছিলেন। যদিও ভারত তাঁর সেই দাবি খারিজ করে দেয়। এরপর ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন না হওয়ার কারণে ভারতের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন ট্রাম্প। প্রথম শুল্ক ঘোষণার কয়েকদিন পরেই ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘোষণা করেন, রাশিয়া থেকে ক্রমাগত তেল কেনার জন্য ভারতকেও শাস্তি দেওয়া হবে। এর পরপরই যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে, যা দুই দেশের মধ্যে দূরত্ব বাড়িয়ে তোলে। যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় চিন ও রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে শুরু করেছে ভারতে।
Source: bangla.hindustantimes.com