মর্মান্তিক! সৌদি পুলিশের গুলিতে নিহত ঝাড়খণ্ডের শ্রমিক, স্ত্রীকে হৃদয় বিদারক শেষবার্তা
তিনি সৌদি আরবের হুন্ডাই ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন।
ভিন দেশে ভারতীয়র সঙ্গে মর্মান্তিক ঘটনা। চলতি মাসেই সৌদি আরবে মৃত্যু হয় ঝাড়খণ্ডের গিরিডিহর এক পরিযায়ী শ্রমিকের। জানা গেছে, সৌদি পুলিশ এবং বেআইনি মদের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এক তোলাবাজ চক্রের সঙ্গে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হন ওই শ্রমিক। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালেও ভর্তি করা হয়। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। মৃত্যুর সঙ্গে লড়াইয়ের মধ্যেই স্ত্রীকে পাঠানো ওই শ্রমিকের হৃদয় বিদারক ভয়েস নোট দেশবাসীকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে।
লাইভ হিন্দুস্তানের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঝাড়খণ্ডের গিরিডিহ জেলার ডুমরি ব্লকের মাধগোপালি পঞ্চায়েতের অন্তর্গত দুধপানিয়া গ্রামের পরিযায়ী শ্রমিক বিজয় কুমার মাহাতো (৩৫) কাজের সূত্রে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন। তিনি সৌদি আরবের হুন্ডাই ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন। কোম্পানির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে তিনি এক জায়গায় কর্মক্ষেত্রের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন। সেখানে স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে একটি গ্যাংয়ের গুলি বিনিময় চলছিল। আর সেই সংঘর্ষের মধ্যেই ভুলবশত ঢুকে পড়েন বিজয়। এরপরেই পুলিশের একটি গুলি দুর্ঘটনাক্রমে বিজয়ের শরীরে লাগে। এরপরেই গুরুতর আহত অবস্থায় বিজয়কে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু যেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তাঁর।
মৃত্যুর আগে স্ত্রীকে পাঠানো শেষ ভয়েস নোটে বিজয় জানিয়েছেন, পুলিশ অন্য কাউকে লক্ষ্য করে গুলি চালাচ্ছিল, কিন্তু ভুলবশত তিনি গুলিবিদ্ধ হন। শেষ বার্তা পাওয়ার পরই কান্নায় ভেঙে পড়ে বিজয়ের গোটা পরিবার। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে নিহতের শ্যালক রাম প্রসাদ মাহাতো বলেন, ঘটনাটি ঘটে ১৫ অক্টোবর। কাজের জায়গার কাছে পুলিশ এবং স্থানীয় তোলাবাজ চক্রের সংঘর্ষের মধ্যে বিজয় ফেঁসে যান। তাঁর কথায়, 'গুলির লড়াই শুরু হওয়ার সময় বিজয় কাছাকাছিই ছিলেন। ভুল করে গুলিটি তাঁর গায়ে লাগে। মৃত্যুর আগে, তিনি স্ত্রীকে খোর্থা ভাষায় একটি ভয়েস নোট পাঠিয়েছিলেন। যেখানে তিনি বলেছিলেন যে তিনি অন্য কারুর পরিবর্তে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন এবং সাহায্যের জন্য আবেদন করেছেন।' বিজয় মাহাতো তার স্ত্রী, পাঁচ ও তিন বছরের দুই শিশু পুত্রকে রেখে গিয়েছেন। তাঁর বাবা-মাও জীবিত রয়েছেন।
অন্যদিকে, ঘটনাটি জানার পরেই ডুমরির বিধায়ক জয়রাম কুমার মাহাতো ভারতীয় দূতাবাস, সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত, ঝাড়খণ্ডের রাজ্যপাল এবং গিরিডির ডেপুটি কমিশনারকে চিঠি লিখে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি করেছেন। তিনি বিজয়ের মৃতদেহ অবিলম্বে ভারতে ফিরিয়ে আনার এবং পরিবারকে আইনি ও আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জন্যও আবেদন করেন। বিধায়ক বলেন যে এটি অত্যন্ত গুরুতর বিষয় এবং ওই শ্রমিককে ন্যায়বিচার দিতেই হবে। এদিকে, দুধপানিয়া গ্রামে বিজয়ের বাড়িতে এখন শোকের ছায়া। বিজয়ের মৃতদেহ ভারতে ফেরার অপেক্ষা করছেন তার পরিবারের সদস্যরা।
Source: www.hindustantimes.com


