১০/১১ দিল্লি বিস্ফোরণ: ফরিদাবাদ-ভিত্তিক সন্ত্রাস মডিউল, কীভাবে মূল অভিযুক্তের সন্ধান পেল পুলিশ?
আরেক তদন্তকারী আধিকারিক বলেন, মুজাম্মিল শাকিলের গ্রেফতারের পরই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন উমর। এরপরই তিনি আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটান লালকেল্লা সংলগ্ন এলাকায়।
দিল্লির লালকেল্লা সংলগ্ন এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর থেকে তদন্তের গতি যেন হঠাৎ ত্বরান্বিত হয়েছে। যে গাড়িটি আগুনের গোলা হয়ে উড়ে গিয়েছিল, তার চালককে মূল অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে উমর উন নবি, পুলওয়ামার একজন চিকিৎসক। পুলিশের ধারণা, এটি ছিল একটি সেলফ-ডিটোনেশন। ওই বিস্ফোরণে অন্তত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যা ২১। পুলিশ সূত্রে খবর, জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামার বাসিন্দা ওই চিকিৎসক একটি বৃহত্তর সন্ত্রাস মডিউলের সঙ্গে যুক্ত ছিল।
দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেলের সুই আধিকারিক জানিয়েছেন, সোমবার সন্ধ্যায় যে হুন্ডাই আই ২০ গাড়িটি বিস্ফোরণ হয়েছিল, সেটি সম্ভবত উমর নিজেই চালাচ্ছিল। এইচটি-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফরিদাবাদ-ভিত্তিক সন্ত্রাস মডিউলের সঙ্গে উমরের যোগ ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। সম্প্রতি একাধিক রাজ্যে যৌথ অভিযান চালিয়ে কয়েক জন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করা হয়। এরমধ্যে জম্মু ও কাশ্মীরের আরও দুই চিকিৎসকও রয়েছে। তাঁদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার করেছে পুলিশ। উদ্ধার হওয়া বিস্ফোরকগুলির মধ্যে ছিল অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ফুয়েল অয়েল, যা শিল্প বিস্ফোরকে ব্যবহৃত হয়।
কীভাবে মিলেছে উমরের সন্ধান?
পুলিশ জানিয়েছে, গাড়ির মালিকের সন্ধান করতে গিয়েই ফরিদাবাদ-ভিত্তিক সন্ত্রাস মডিউলের সংযোগ পাওয়া যায়। এক আধিকারিক বলেন, 'তার (উমরের) কাছে পৌঁছানোর আগে আরও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। গাড়িটি (হুন্ডাই আই২০) সলমন নামে এক ব্যক্তির নামে রেজিস্টার ছিল। কিন্তু সলমন বলেন যে তিনি গাড়িটি দেবেন্দর নামে এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করেছিলেন। এরপর দেবেন্দরকে আটক করা হয়। দেবেন্দর আবার জেরায় বলেন, তিনি গাড়িটি তারিক নামে এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করেন। আমরা যখন তারিককে সন্ধান করছিলাম, তখন দেখতে পায় ওই গাড়িতে ছিল উমর।' তিনি আরও বলেন, 'আমরা যখন তারিককে খুঁজছিলাম, তখন আমরা দেখতে পায় যে গাড়িটি উমরের কাছে ছিল। আমরা আরও জানতে পেরেছি যে উমর তার ডাক্তার বন্ধু-মুজাম্মিল শাকিল এবং আদিল আহমেদের সঙ্গে একই সন্ত্রাস মডিউলে কাজ করত।' তদন্তে প্রকাশ, ফরিদাবাদের আল ফালাহ ইউনিভার্সিটি এবং হাসপাতাল কেন্দ্রিক সন্ত্রাস মডিউলের সঙ্গে যুক্ত ছিল উমর। একই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন ডাঃ মুজাম্মিল শাকিল, যার বাড়ি থেকে ২,৯০০ কেজি বিস্ফোরক তৈরির উপাদান, অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করেছিল জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ ও অন্যান্য তদন্তকারী সংস্থা।
আরেক তদন্তকারী আধিকারিক বলেন, মুজাম্মিল শাকিলের গ্রেফতারের পরই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন উমর। এরপরই তিনি আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটান লালকেল্লা সংলগ্ন এলাকায়। তাঁর কথায়, 'জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের কাছ থেকেও ৩ চিকিৎসকের যোগসূত্র নিশ্চিত করেছি আমরা। হুন্ডাই আই২০ গাড়িটি বিস্ফোরণের সময় উমরই চালকের আসনে ছিল। আমাদের প্রাথমিক তদন্ত অনুসারে, উমর গাড়িটি চালাচ্ছিল এবং সম্ভবত তার মৃত্যু হয়েছে। আমরা মর্গের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলছি।' সোমবার রাতের বিস্ফোরণের পরই পুলিশ জেরা করছে উমরের দুই ভাই আশিক আহমদ ও জহুর আহমদকে। তাঁদের মাকেও হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। জানা গিয়েছে, বড় ভাই একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন এবং ছোট ভাই স্টেনোগ্রাফির পড়াশোনা করছে।
দিল্লি বিস্ফোরণ ও তদন্ত
ইতিমধ্যে যে তথ্য সামনে এসেছে তাতে জানা গেছে, যে গাড়িতে বিস্ফোরণ হয়েছে তা একাধিকবার হাতবদল হওয়া। তদন্তকারীদের এও সন্দেহ, আত্মঘাতী হামলা হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত সরকারিভাবে ‘সন্ত্রাসবাদী হামলা’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়নি, তবে পুলিশ ইতিমধ্যেই মামলা দায়ের করেছে ‘আনলফুল অ্যাক্টিভিটিজ প্রিভেনশন অ্যাক্ট’-এর আওতায়। বর্তমানে দিল্লি পুলিশ ও জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ যৌথভাবে বিস্ফোরণের কারণ ও নেটওয়ার্কের ব্যাপ্তি যাচাই করছে। তদন্তকারীরা মনে করছেন, এই বিস্ফোরণ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে সক্রিয় এক নতুন ধরনের টেরর মডিউলের অংশ হতে পারে।
Source: www.hindustantimes.com


